শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

তিনি ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

১৯২৯ সালের ৩ মে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় তার জন্ম। ৪২ সালে এসএসসি, ৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৪৫ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে ভর্তি হন, সেখানে বিএ পাস করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড শেষ করেন। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেন। তার কর্মজীবন কেটেছে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করে। ১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।

আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ছেলে শাফী ইমাম রুমী শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বামী শরীফ ইমামও মারা যান। ৭১ সালে স্বামী আর সন্তান হারানো জাহানারা ইমাম স্বাধীনতা উত্তর এদেশের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের পক্ষে তিনি ছিলেন প্রথম কাতারের সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধকালে তার লেখা দিনলিপি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ছিলো এক অনবদ্য সৃষ্টি, যা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। শহীদ জননীর নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠন করা হয়- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এর পাশাপাশি ৭০ টি সংগঠনের সমন্বয়ে সে বছরই ১১ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। যার আহবায়কও ছিলেন জাহানারা ইমাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমাদের শহীদ জননী রাস্তায় নামেন। ততদিনে তার সারা শরীরে দুরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যায়।

একদিকে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রাজনৈতিক বান্ধব দলের মানুষরুপি পশুদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া, অন্যদিকে রাস্ট্রপক্ষের মদদপুষ্ট হয়ে সরাসরি আক্রমন করে বসে ৭১ সালের হায়েনাদের দল- গোলাম আযম নিজামী গং। জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে মামলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহীতার। রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়েই শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে ইন্তেকাল করেন।